খেলা

ফুটবলের বিপ্লবী ক্যানিজিয়া ও সক্রেটিস!


অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বিকাল ০৩:৫৬, ১১ ডিসেম্বর ২০২২






ফুটবলের বিপ্লবী ক্যানিজিয়া ও সক্রেটিস!

চা খেতে বের হলাম সকালে। বাসায় জুটলো না। সবাই ঘুমোচ্ছে। নেদারল্যান্ডকে হারিয়ে  অঘোর ঘুম। আমি মাঝরাতে একবার উঁকি দিয়েছিলাম। দেখি নেইমারের সাথে আমার ছেলেও কাঁদছে। ভয় হলো মেয়ের জন্য,একটু পরে মেসির জন্য সে-ও না কাঁদে!
আমি এখন কোনো খেলা দেখিনা। আমি আর চাপ নিতে  পারি না। একটা সময় আট ব্যান্ডের রেডিও পকেটে নিয়ে ঘুরতাম। ক্রিকেট,ফুটবল কোনোটাই বাদ যেত না। যখন চাকরি করি তখনও। একবার থমসনের বলে জহির আব্বাস সেঞ্চুরি করতে পারে কি পারে না সেই টেনশনে যেই সিগারেট ধরিয়ে ফেলেছি তক্ষুনি কনফারেন্স শেষ করে বেরিয়ে এলেন প্রেসিডেন্ট। তার পেছনে এক ডজন জেনারেল। আমি ছিলাম জেনারেল সুফির এডিসি। আমার বেয়াদবির জন্য তাঁরই কমান্ড হারানোর কথা। কিন্তু এরশাদ মুচকি হাসলেন। সেটা রিচি বেনোর কমেন্ট্রি শুনে না আমার লেজেগোবরে  অবস্হা দেখে জানি না;তবে জহির আব্বাস সেদিন সেঞ্চুরি হাঁকালেও আমি আর কোনোদিন শুনিনি। তওবা করেছিলাম।
যাই হোক চা খেতে নেমে দেখি ফুটপাথ সরগরম। শাহাদাত আমাকে চা দেয় আর মুচকি মুচকি হাসে। কারণ সে আমার গায়ে ব্রাজিলের জার্সি দেখেছে একবার। সে আর্জেন্টিনা। 
আমাদের সময় বাংলাদেশে ছিল দুটো দল,মোহামেডান আর আবাহনী। কিন্তু দেশের বাইরে ছিল একটাই,ব্রাজিল। আমি সেই ব্রাজিলেও গেছি রাজশাহীর মেয়র লিটনের সাথে। সাওপাওলোতে। পেলের ক্লাব সান্টোসে। কিন্তু রাত ১টায় খেলা হবে শুনে লিটন আমাকে কান ধরে ফিরিয়ে আনে হোটেলে। ওখানকার পথঘাট চিনি না,ভাষা বুঝি না। তবে যতক্ষণ  ছিলাম ততক্ষণ আমার চোখ একজনকে খোঁজে। সেই একজনই ছিল আমার আইডল,আমার নায়ক। আমি তাকে দেখলে ঠিকই চিনতাম। ঝাকড়া চুল,৬ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা। বুকে হয়তো লেখা গণতন্ত্র। হাতে চে গুয়েভারার বই। কানে জন লেননের গান...
কিন্তু খেলা দেখার ভাগ্য হলো না। গাব্রিয়েলা বলে একটা ধারাবাহিক নাটকের টিভি প্রচার শেষ হলে ফুটবল শুরু হবে মাঝরাতে। না হলে ফুটবল বিজ্ঞাপন পাবে না। মানে বানিজ্য হবে না। 
আমার সেই আইডল এই বানিজ্য করার জন্য পেলের উপর ক্ষিপ্ত। বুকে গণতন্ত্র মুক্তি পাক লিখে খেলার মাঠে নেমে সামরিক জান্তার চক্ষুশূল সে। ইতালির ক্লাব ফুটবল খেলতে গিয়ে আর এক হৈচৈ - তিনি ইতালি ভাষা শিখে একজন সোসালিস্ট সাংবাদিকের লেখা শ্রমিকদের ওপর বই পড়া শুরু করেছেন।
যে কথা বলছিলাম,শাহাদাতের চায়ের দোকানে তখন তুফান। বরিশাল গৌর নদীর ড্রাইভার বাবলু মিয়া চেঁচাছে আর্জেন্টিনার ক্যানিজিয়ার কথা বলে। তার হেড, তার লব,তার পাসের জন্যই নাকি মারাদোনা মারাদোনা...
আর মেসি নাকি মেসিই,তার কোনো এ্যাসিস্ট লাগে না। তারপর আসে নেইমারের প্রসঙ্গে। ভাঙা পা নিয়ে তোর শালা খেলার কী দরকার!তোর পায়ের দাম কত জানিস?তোর কিসের অভাব...
বাবলু ভাই আবার ফিরে গেলেন ক্যানিজিয়ায়,তারপর এসে থামলেন মোহামেডানের আবুলে এসে। আবুল নাকি ক্যানিজিয়ার মতো অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে হঠাৎ ব্রেক কষে লং থ্রো করতেন, সেগুলো নাকি ছিল কর্নার কিকের বাপ! 
তারপর হঠাৎ চুপ করলেন বাবলু। কার কথা মনে করে তার চোখ দু'টো ছলছল করে উঠলো। কে সে ক্যানেজিয়া? আমার যেমন জিকো না,ফ্যালকাও না, রোনালদো না,কার্লোস না....সেই দুরন্ত মিড ফিল্ডার সক্রেটিস। যার জার্সিতে লেখা গনতন্ত্র....Democracia...

লেখক ফেরদৌস হাসানের ওয়াল থেকে...