মতামত

শুদ্ধ বাংলা: কথ্য যেন লেখ্য


আকতার হোসেন রতন
প্রকাশিত: রাত ১১:৫৯, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২






শুদ্ধ বাংলা: কথ্য যেন লেখ্য

এক সময় সুশিল বাঙ্গালীর যোগ্যতার মাপকাঠিতে শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষা লেখনী যাচাই করা হত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। পরীক্ষার প্রশ্নে লিখা থাকত “সাধু-চলিত মিশ্রণ দোষনীয়”। 

যতটুকুই শিক্ষিত হোক না কেন কমপক্ষে স্বাক্ষরতা জ্ঞান থাকলে চেতনায় নাড়া দিত ভাষার শুদ্ধতার। আর কথ্যরূপে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। যখন যেমন পরিবেশ তখন তেমন ভাষা।

মনস্তাত্বিকভাবে এখনও মানুষ সাবধানে থাকে যেন ভুল হয়ে না যায়। কিন্তু শুদ্ধতার মাপকাঠি পরিবর্তন হয়েছে আপাত: দৃষ্টিতে। সাধু-চলিত মিশ্রণ দোষনীয় জেনেও তা হরহামেশাই হতে হতে এখন আর কেউ তা দেখে না একমাত্র বাংলা সাহিত্যের পড়াশুনা ছাড়া।

কেননা যুগের চাহিদা। অনেক নতুন নতুন দৈনিক পত্রিকাও তাদের কাটতি বাড়াতে লিখনীতে আনে পরিবর্তন। লোক যোগাযোগের বিষয়টাই মুখ্য। আর বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাষার লিখনীতে করেছে নানা ব্যবচ্ছেদ। যে যেমন পারে লিখে। নেই শুদ্ধতার বালাই। কেননা, “কেউ তো আমার পরীক্ষার খাতা দেখছে না” এমন মানসিকতা থেকেই হয়ত লোক যোগাযোগকে প্রাধান্য দিয়ে চলছে  শুদ্ধ ভাষার উপর নির্মম অত্যাচার, যে ভাষার জন্য আন্দোলন আর জীবনদান হয়ে আছে পৃথিবীর এক অনন্য ইতিহাস ও প্রেরণা। এর উপর রয়েছে ইংরেজী শব্দের বাংলায় অভিবাসন। 

আমারতো প্রায়ই বানান ভুল হয় কেননা আমি বাংলা অভিধান সামনে রেখেও বার বার পাতা উল্টিয়ে শুদ্ধ শব্দ যাচাই করতে আলসেমী ধরে। অথচ অভিধান দেখে শুদ্ধ লিখা দোষের কিছু না।
চাকুরী জীবনে একজন বস পেয়েছিলাম যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের একজন জনপ্রিয় অধ্যাপক ছিলেন। তাঁকে দেখেছি দুই তিন রকমের ইংরেজী টু ইংরেজী ইংরেজী টু বাংলা এমনকি বাংলা টু বাংলা অভিধান রাখতেন আর বার বার পাতা উল্টাতেন।

আমরা আমাদের জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্যকে এত পাশ কাটিয়ে চলেছি যে, আমরা যেন এখন আমাদের জাতিস্বত্ত্বা থেকে অজান্তে অনেক দুরে সরে যাচ্ছি। সামাজিক অবস্থানের পিছনে অন্ধভাবে ছুটে চলা আর ভিনদেশীদের আচারকে প্রাধান্য দেয়াটাই তিল তিল করে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মুখে যা বলি যেমন বলি তেমন লিখি এখন। মাতৃভাষায় লিখিত পরিশীলিত অংশের সাথে মিশে গেছে স্থানীয় ভাষা। এখনও অনেক উদার মানুষ আছেন যারা ভুল বানান দেখলে চেষ্টা করেন তা ধরিয়ে দিতে। তবে তা সংখ্যায় নগণ্য। যদি পারস্পরিক সহযোগিতার মোলায়েম পরিবেশ থাকত তবে সংখ্যাটা অনেকগুণ বেড়ে যেত।

আমরা খুব বেশীমাত্রায় স্বকিয়তা বিবর্জিত বাঙ্গালী হয়ে উঠেছি প্রধানত: নাটক সিনেমা বিনোদনের বদৌলতে। কথ্যকে করেছি হুবহু লেখ্য। অলসতা কিংবা আয়েসী মনোভাব হয়ত এর জন্য দায়ী।

যে ভাষার প্রেরণায় শহীদ দিবস হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, সেই বাংলায় যেন শুদ্ধতা বজায় থাকে সর্বত্র ও সর্বাত্মকভাবে এই হোক একুশের অঙ্গীকার।

আকতার হোসেন রতন
মুক্তমনা লেখক