
মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম (৫২) দাবি করেছেন, তাঁর বাসার নিচ থেকে তিন থেকে চারজন ব্যক্তি মুখে কাপড় বেঁধে তাঁকে অপহরণ করেছিলেন। উদ্ধার হওয়ার প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর গতকাল রবিবার দুপুর ১টার দিকে সন্তানদের মুখোমুখি করার পর তিনি এ দাবি করেন। পরে আদালতের মাধ্যমে তাঁর আরেক মেয়ে আদুরী খাতুনের জিম্মায় দেওয়া হয়। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
খুলনা নগরের মহেশ্বরপাশার বাড়ি থেকে গত ২৭ আগস্ট নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এ ঘটনায় মামলা হলে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের ফুলপুরে এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের পর তা রহিমা বেগমের বলে দাবি করেন মেয়ে মরিয়ম মান্নান। এরপর গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, উদ্ধারের পর থেকে কোনো কথাই বলছিলেন না রহিমা বেগম। এরপর রবিবার দুপুর ১টার দিকে তাঁকে সন্তানদের মুখোমুখি করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, রহিমা বেগম দাবি করেছেন, তাঁকে অপহরণের পর অজ্ঞাত স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়। জমিজমার বিরোধ থাকা কিবরিয়া, মহিউদ্দিনসহ কয়েক ব্যক্তি তাঁর কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে সই নেন ও বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে তাঁরা তাঁকে এক হাজার টাকা দিয়ে অজ্ঞাত স্থানে ফেলে যান। মণি নামের একটি মেয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। মণির সহযোগিতায় তিনি বাসে ওঠেন। রহিমা বেগমের দাবি, তাঁকে অপহরণকালে তাঁর স্বামী হেলাল হাওলদার বিষয়টি দোতলা থেকে দেখছিলেন। রহিমা বেগম স্বামীকে দরজা লাগিয়ে দিতে বলেন।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান আরো জানান, রহিমা বেগমের দাবি, তিনি কিছুই চিনতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা হয়ে পূর্বপরিচিত ভাড়াটিয়া বোয়ালখালীর সৈয়দপুর গ্রামে যান; কিন্তু তাঁর কাছে কোনো মোবাইল নম্বর না থাকা ও কোনো নম্বর মনে না থাকায় কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। আর ভয়ে তিনি খুলনায় ফিরে আসেননি।
পিবিআইর পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা রহিমা বেগমের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করছি। তাঁর স্বামী ও অভিযুক্তদের বক্তব্য খতিয়ে দেখা হবে। তাঁর স্বামী এর আগে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলেন, দুই ঘণ্টা পর তাঁর স্ত্রীর খোঁজ না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করেন বলে জানিয়েছিলেন। রহিমা বেগমের বক্তব্য অনুযায়ী অন্যদের অবস্থান কখন কোথায় ছিল, তা-ও দেখা হবে। প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা হবে। ’
এদিকে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মা ও মেয়েরা মিলে অপহরণ-গুমের নাটক সাজিয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়ার পর প্রায় ১৬ ঘণ্টা কোনো কথা বলেননি গৃহবধূ রহিমা বেগম। দুপুরের পর মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি অপহরণের কথা বলেছেন। এর আগে সকালেও তিনি (রহিমা বেগম) তাঁর সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে চাননি।
রহিমা বেগমকে গতকাল সকাল ১১টার দিকে সোনাডাঙ্গা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে পিবিআই কার্যালয়ে আনা হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। তাঁকে উদ্ধারের পর আরেক মেয়ে আদুরী খাতুনের জিম্মায় হস্তান্তর করেছেন আদালত। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে খুলনার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক আল আমিনের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার পর রহিমা বেগমকে হস্তান্তর করা হয়।